ডাঃ ফারহানা মোবিন মেডিকেল অফিসার:: চুল সৌন্দর্য্যরে অন্যতম প্রতীক। নারী-পুরুষ সবার সৌন্দর্য্যরে জন্য চাই উজ্জ্বল মসৃন চুল। চুল সুস্থ, সুন্দর, জটমুক্ত হলে মানানসই চুলের স্টাইলে মুখটা লাগবে আরো বেশি আকর্ষণীয়। স্মার্টনেস বেড়ে যাবে আরো বেশি। নিজেকে তাই আকর্ষণীয় ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন করে উপস্থাপন করে তোলার জন্য চাই পুষ্টি সমৃদ্ধ চুল। বর্তমান প্রতিযোগীতার ভীড়ে সামান্য কিছু সচেতনতা ও যতœ আপনার চুলকে করবে আরো বেশি সুন্দর। আসুন নিজেকে সুন্দর করি। প্রতিযোগীতার বাজারে গুনের সাথে রূপেরও যথেষ্ট প্রয়োজন।
চুল পড়ে যাবার কারণ ঃ
১। মনোদৈহিক সমস্যা, পারিবারিক অশান্তি, গভীর রাত জেগে পড়া বা ল্যাপটপে ও ট্যাবে কাজ করা, টিভি দেখা। এই কাজগুলোর জন্য চুল ঝড়তে পারে।
২। ভেজাল খাবার হলো চুল পড়ে যাবার অন্যতম প্রধান কারণ। দেহে প্রচুর পরিমানে আয়রন ক্যালসিয়ামের অভাবের জন্যও চুল পড়ে যায়। আয়রন শরীরে রক্ত তৈরী করে। আর ক্যালসিয়াম চুল, দাঁত, হাড় মজবুত করতে রাখে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তাই দেহে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের অভাবে চুল পড়ে।
৩। সঠিক সময়ে খাওয়া, ঘুমানের অভাব, অতিরিক্ত রৌদ্র ও ধূলাবালিতে থাকা, অতিরিক্ত মানসিক কষ্টে চুল পড়ে।
৪। রক্তে চিনি মাত্রা, হরমোনের অসাম্যাবস্থা, রক্তচাপের উঠানামার জন্যও চুল পড়ে যায়। বড় কোন অপারেশন, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপী দেয়ার পরেও চুল পড়ে।
৫। কেমোথেরাপি ছাড়াও কিছু ওষুধ আছে। যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় চুল ঝড়তে পারে। দেহে উদ্ভিজ্জ আমিষের (ডাল, শিমের বিচি, শষ্য) তুলনায় প্রাণীজ আমিষ (মাছ, মাংষ, ডিম, দুধ) এর পরিমাণ বেড়ে গেলেও চুল ঝড়ে যায়। ওজন বেশি বা দেহে কোলস্টেরল বেশি, এমন ব্যক্তিদের প্রাণীজের তুলনায় উদ্ভিজ্জ আমিষ বেশি বেশি খাওয়া দরকার।
৬। মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রসাধনী, ভেজাল খাবার, দূষিত পানি, ভেজা চুল বেধে রাখার জন্যও চুল ঝড়ে যায়। বংশগত কারণও দায়ী। পারিবারিক কারণেও চুল পড়ে যায়। রক্তের সম্পর্কিত আত্মীয় স্বজনদের মাথার চুল কম থাকলে, কারো মাথার চুল ঝড়তে পারে।
৭। চুলে অতিরিক্ত রং, অতিরিক্ত শ্যাম্পু, অধিক সংখ্যকবার হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করলেও চুল পড়ে যায়। গর্ভাবস্থা, সন্তান জন্ম দেয়ার পরে সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ দানকালীন সময়েও সুষম পুষ্টিকর খাবার এর অভাবে চুল পড়ে যায়।
৮। দেহের ওজন অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেলে দেহের অধিকাংশ অংশগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা। সেক্ষেত্রে দেহের শিরা-উপশিরা এবং চুলের গোড়ার ¯œায়ুগুলো সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে না। তখনও চুল পড়ে যায়।
চুল পড়ে যাওয়া রোধে আমাদের করণীয় ঃ
১। নিয়মিত সবুজ, হলুদ শাক সবজি, মৌসুমী ফল, তিতা খাবার (চিরতার রস, করলা, নিম) খান। প্রতিদিন ২- ২.৫ লিটার পানি পান করুন। বেশি পানি খেতে খারাপ লাগলে কমপক্ষে প্রতিদিন দুই লিটার পানি পান করুন। পানি জাতীয় খাবার খান বেশি করে, এতে পা থেকে মাথা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচল করবে। পুরো দেহে সঠিক ভাবে রক্ত চলাচল করলে, চুল পড়বে কম।
২। দেহে রক্ত তৈরী হয়, এমন ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে। সেই সাথে যোগ করুন ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার (যেমন- দুধ, দুধ দিয়ে তৈরি খাবার)।
৩। নিয়মিত চুল এর পরিচর্যার করুন। অতিরিক্ত রৌদ্রের তাপ ও সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করুন আপনার চুলকে।
৪। মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রসাধনী কখনোই ব্যবহার করবেন না। এতে চুলের ক্ষতি হবে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওজন সর্বদা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৫। চুল পড়ে যাওয়া রোধ করা ও চুল ভালো করার জন্য বাজারে নানান রকম ওষুধ বিক্রি হয়। এসব ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত খাবেন না।
৬। বড় কোন অপারেশান এর পরে, মাতৃদুগ্ধদানকালীন সময়ে অবশ্যই আয়রন, ক্যালমিয়াম জাতীয় খাবার এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খান।
৭। যেকোন মাদকদ্রব্য, ধূমপান বর্জনীয়। সর্বদা হাসি খুশি থাকুন।
৮। যে কোন নেতিবাচক চিন্তা ও হতাশা চুল ঝড়ার জন্য দায়ী।
৯। চুলে কেমিক্যাল যতো কম ব্যবহার করা যায়, ততোই ভালো। চুলে অতিরিক্ত হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করলেও চুল ঝড়তে পারে।
১০। চুল ঠিকমতো আচড়াবেন। এতে চুলের প্রতিটি প্রান্তে ¯œায়ুর কার্যপ্রবাহ সচল হবে। পুরো মাথাতে ¯œায়ু প্রবাহ সঠিক হলো চুলের বৃদ্ধি ও বর্ধন হতে হবে।
১১। মেনোপোজ (মাসিক চিরতরে বনন্ধ হওয়া) হবার পরে দেহে সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও আয়রনের অভাবে প্রচুর পরিমাণে চুল ঝড়ে। তাই এই সময় ক্যালসিয়াম প্রতিদিন একটি করে খান এবং সেই সাথে প্রয়োজন প্রচুর পরিমানে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। তবে বেশি উপকারের আশায় অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবেন না। হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল ঝড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।